পাহাড় দেখে একদিনেই আবার রাজধানীতে ফেরা কি সম্ভব? ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে গিয়ে পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য দেখে খুব সহজে একদিনেই ফিরে আসা যায়। কাকডাকা ভোরে রওয়ানা দিয়ে হালুয়াঘাটের পাহাড়ের পাদদেশ ঘুরেফিরে রাত ১০টার মধ্যেই ফিরে আসতে পারবেন ঢাকা।
নামের ইতিহাস
নামটি কেন হালুয়াঘাট? উত্তর জানতে দৃষ্টি ফেরাতে হবে বেশ পেছনের দিকে। ১৬৫০-১৭০০ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি কোনো এক সময়ের কথা। তখন দর্শা নামের নদীর ঘাট হয়ে নৌপথে এ অঞ্চলের সব ব্যবসাবাণিজ্য পরিচালিত হতো। হালুয়া অর্থ চাষি। হালচাষিরা নানা কাজে এ ঘাট ব্যবহার করত বলেই এর নাম হয়েছে হালুয়াঘাট। অর্থ দাঁড়ায় হালুয়াদের ঘাট। আবার অনেকেরই এ বিষয়ে মত একেবারে ভিন্ন। ঘাটটি হালুয়া নামের এক ব্যক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল বলেই নাকি এর নাম হয়েছে হালুয়াঘাট।
এ উপজেলার এক পাশ ঘিরে রেখেছে মেঘালয়ের মেঘছোঁয়া বড় বড় সব পাহাড়। মুক্ত আকাশে এখান থেকেই দেখা যায় বড় তুরা পাহাড়টিও। তাই হালুয়াঘাটের নাম নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে কিন্তু কোনো মতভেদ নেই।
কোথায় ঘুরবেন
সূর্যপুর, পানিহাতা আর কড়ইতলী প্রভৃতি জায়গা থেকেই মেঘালয়ের সব পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে কাছের জায়গা কড়ইতলী। এখানকার বিজিবি ক্যাম্পের পাশ দিয়ে একটি রাস্তা চলে গেছে শেরপুরের দিকে, আর অন্যটি সূর্যপুর হয়ে ধোবাউড়ার দিকে। এই দীর্ঘ রাস্তার একপাশের মেঘালয় সীমান্তে ছায়ার মতো ঘিরে আছে শুধুই পাহাড়। পাহাড় থেকে সীমানা অতিক্রম করে মাঝেমধ্যে দল বেঁধে নেমে আসে হাতি কিংবা হরিণ।
পাহাড়ে রোদ-বৃষ্টির খেলা
হালুয়াঘাটের শাপলা বাজার মোড় পার হতেই ভাগ হয়ে যায় রাস্তাটি। পাল্টে যায় চারপাশের দৃশ্যও। রাস্তার ওপাশে দূরে বড় বড় পাহাড়। দৃষ্টির দুই পরতেই শুধু পাহাড় আর পাহাড়। একটির পেছনে আরেকটি। যেন একটি আরেকটির ছায়া। কোনো কোনোটিকে ঘন মেঘ এসে ঢেকে দিচ্ছে। সেখানে মেঘের সঙ্গে পাহাড়ের যেন মিতালি চলছে। কোনো কোনো পাহাড়ে ঝুম বৃষ্টি। আবার মেঘের ফাঁক বুঝে একরাশ রোদের আলো এসে পড়েছে কোনো কোনোটিতে।
এক পাহাড়ে বৃষ্টি, অন্যগুলোতে তখন রোদ। এভাবে হালুয়াঘাটে প্রতিদিন পাহাড়ের গায়ে চলে রোদ-বৃষ্টির খেলা।
যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবি
কড়ইতলী গ্রামটি গোবরাকুড়া ইউনিয়নে, হালুয়াঘাট শহর থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার ভেতরে। বাজারকে পেছনে ফেলে উত্তরদিকে এগোতে থাকলে ভালো লাগা সব দৃশ্য আপনাকে ঘিরে ধরবে। কোনো জায়গায় থমকে দাঁড়াতে হবে। ধানক্ষেতে জমে থাকা পানিতে নিঃশব্দে মাছ ধরছে একঝাঁক বক। সবুজের বুকে সাদা বক। অদ্ভুত সুন্দর! মনে হবে সবুজ আঁচলে কোনো শিল্পী যেন ভালোবাসার তুলি দিয়ে সাদা আঁচড় বসিয়ে দিয়েছে।
গারো নারী আর পাহাড়ি নদী
গ্রামের আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে কড়ইতলীর দিকে যতই এগোবেন, ততই দৃষ্টি স্থির হয়ে যাবে। মনে হবে, কোনো স্বপ্নময় দেশে যেন চলে এসেছেন। দৃষ্টির সামনে পাহাড়গুলো হাতছানি দিয়ে ডাকবে। রাস্তার পাশেই ফসলের মাঠ। গোটা মাঠেই চাষে ব্যস্ত গারো নারীরা। হাঁটু অবধি কাদায় নেমে ফসল বুনছে অথবা কাটছে তারা। পাহাড় দেখতে দেখতে আবিষ্কার করবেন খালের। খাল মনে হলেও এটি আসলে পাহাড় থেকে নেমে আসা একটি ছোট নদী। বর্ষায় পাহাড়ি ঢলের জলরাশি নিয়ে এটিই আছড়ে পড়ে কংস নদের বুকে। আর সে সময় ভেসে যায় দুই পাড়ের লোকালয়।
কু-লি পাকানো ধোঁয়া
কড়ইতলীতে পাহাড় থেকে উড়ে আসে বকের ঝাঁকও দেখবেন। দেখবেন দূর পাহাড়ে মেঘ ঝরছে। আরো দেখবেন পাহাড়ে কু-লি পাকানো ধোঁয়া উড়ছে। মনে হবে, পাহাড়ের বুকে যেন কষ্টের আগুন লেগেছে। প্রচ- গরমের পর অল্প বৃষ্টি হলে পাহাড়ে এ রকম ধোঁয়ার মতো বাষ্প ওঠে। দূর থেকে তা দেখতে সত্যি অন্য রকম লাগে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে হালুয়াঘাট যাওয়ার একাধিক বাস আছে। ভাড়া ২০০ টাকা। হালুয়াঘাট থেকে রিকশায় বা অটো ভাড়া করে ঘুরতে পারেন। দুপুরে খাওয়ার একাধিক হোটেল রয়েছে হালুয়াঘাট বাজারে। তবে থানার পাশে জসিমের ঘরোয়া ঢঙের ছোট্ট হোটেলটিতে মিলবে হাঁসের মাংস ও নানা পদের ভর্তা।
রাতে থাকতে হলে হালুয়াঘাট সদরে কিছু আবাসিক হোটেল আছে, সেখানে থাকতে পারেন। রুমভাড়া ২০০ টাকা। ভালো আবাসিকে থাকতে হলে হালুয়াঘাট ছেড়ে চলে আসতে পারেন ময়মনসিংহ। এখানে থাকা ও খাওয়ার সুব্যবস্থা আছে।
0 Comments