অজু ও গোসলে সতর্কতা

 মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ

পবিত্রতা অর্জনের জন্য নারী-পুরুষ উভয়কেই অজু ও গোসল করতে হয়। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে কোন ভুলগুলো হলে অজু ও গোসল হবে না।

অজুর েেত্র অজুর অঙ্গগুলো এবং ফরজ গোসলের েেত্র পুরো শরীর পরিপূর্ণভাবে পানি দ্বারা ধৌত করা আবশ্যক। অন্যথায় পবিত্রতা অর্জিত হবে না।


বিশেষ করে অজুর কোনো অঙ্গ সামান্যও শুকনা থেকে গেলে তার জন্য হাদিসে জাহান্নামের শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো এক সফরে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাদের পেছনে পড়ে গেলেন। পরে তিনি আমাদের কাছে পৌঁছলেন। এদিকে আমরা (আসরের) নামাজ আদায় করতে বিলম্ব করে ফেলেছিলাম। তাই (তা আদায় করার জন্য) আমরা অজু করা শুরু করলাম। এসময় আমরা আমাদের পা কোনোমতে পানি দ্বারা ভিজিয়ে নিচ্ছিলাম। তখন তিনি উচ্চৈঃস্বরে বলেন, ‘সর্বনাশ! গোড়ালির নিম্নাংশগুলোর জন্য জাহান্নামের আগুন রয়েছে।’ তিনি দুই বা তিনবার এ কথা বললেন। (বুখারি, হাদিস: ৯৬, মুসলিম, হাদিস: ২৪১)

অনেক সময় তাড়াহুড়া করে অজু করার কারণে মানুষের পায়ের গোড়ালি শুকনা থেকে যায়। বিশেষ করে শীতকালে এ ধরনের কাজ বেশি হয়ে যায়। তাই আমাদের উচিত অজু করার েেত্র বিশেষভাবে ল্য রাখা, যাতে কোনো অঙ্গ শুকনা না থেকে যায়। পবিত্রতা অর্জনে এমন উদাসীনতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কারণ ফরজ গোসল ও অজুর সময় কোনো অঙ্গের সামান্য থেকে সামান্যতম পরিমাণ শুকনা থাকলে পবিত্রতা অর্জন হবে না।

এ বিষয়ে আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন (রহ.) বলেন, ‘মানুষ যদি পবিত্রতা অর্জনের অঙ্গে তৈলাক্ত বস্তু (তেল, ক্রিম) ব্যবহার করে, তাহলে দেখতে হবে যদি উক্ত তৈলাক্ত বস্তুটি জমাট বাঁধা ও আবরণবিশিষ্ট হয়, তাহলে পবিত্রতা অর্জনের পূর্বে অবশ্যই তা দূর করতে হবে। যদি তৈলাক্ত বস্তু সেভাবেই জমাট বাঁধা অবস্থায় থেকে যায়, তাহলে তা চামড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছতে বাধা দেবে। এতে পবিত্রতা অর্জন হবে না। কিন্তু যদি তৈলাক্ত বস্তুটির কোনো আবরণ না থাকে কিন্তু পবিত্রতার অঙ্গগুলোর ওপর সেগুলোর চিহ্ন অবশিষ্ট থেকে যায়, তাহলে কোনো তি নেই। কিন্তু এ অবস্থায় ওই অঙ্গের ওপর হাত ফিরিয়ে দেয়া গুরুত্বপূর্ণ। কেননা সাধারণত তৈলাক্ত বস্তু থেকে পানি আলাদা থাকে। সুতরাং হতে পারে, পবিত্রতার েেত্র পুরো অঙ্গে পানি পৌঁছবে না।’ (ফাতাওয়াত তাহারাহ, পৃষ্ঠা: ১৭৪)

যেসব জিনিস অজু ও গোসলের সময় শরীরে পানি পৌঁছতে বাধা প্রদান করে না সেগুলো হলো সরিষা, তিল, কালোজিরা ইত্যাদির তেল, অলিভ অয়েল, বডি লোশন, ক্রিম, লিকুইড ভ্যাসলিন, গ্লিসারিন ইত্যাদি। কারণ এগুলো দ্বারা চামড়ার ওপর প্রলেপ পড়ে না বা আবরণ তৈরি হয় না। তবে এ অবস্থায় অজু বা গোসলের সময় যথাসম্ভব হাত দিয়ে অজুর স্থানগুলো ও শরীরের বিভিন্ন স্থান ভালো করে ঘষে দেয়া উচিত, যেন যথাস্থানে পানি পৌঁছেছে কি না, সেরকম সন্দেহ না থাকে। যেমন ঠা-ার সময় অজু বা গোসল করলে অজুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ ভালোভাবে ঘষে নিতে হয়।

অনুরূপ নারীদের মেহেদির রঙ, সাধারণ পাউডার, চোখের সুরমা, আতর, সেন্ট ইত্যাদি চামড়ায় পানি পৌঁছাতে কোনো বাধা প্রদান করে না। তবে বর্তমানে বাজারে কিছু কেমিক্যালযুক্ত কৃত্রিম টিউব মেহেদি পাওয়া যায়, যেগুলো চামড়ায় পাতলা আবরণ সৃষ্টি করে। তাছাড়া নেইলপলিশ, কিছু লিপস্টিক ব্যবহার করলেও চামড়ার ওপর প্রলেপ পড়ে যায় বলে চামড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছতে বাধাগ্রস্ত হয়। এ ধরনের েেত্র অজু ও গোসলের পূর্বে এগুলো ভালোভাবে তুলে নিতে হবে।

দেয়ালে লাগানোর রঙ, মবিল, আঠাজাতীয় বস্তু ইত্যাদি শরীরে লাগলে তা জমাটবদ্ধ হয়ে শরীরে আবরণ সৃষ্টি করে। সুতরাং অজু ও গোসলের আগে এগুলো তুলে ফেলতে হবে।

যেসব ক্রিম, চর্বিজাতীয় ও তৈলাক্ত বস্তু শরীরে লাগানোর ফলে চামড়ার ওপর প্রলেপ বা আবরণ পড়ে সেগুলো ব্যবহার করলে অবশ্যই অজু-গোসলের সময় সেই আবরণ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। মোট কথা, অজু শুদ্ধ হওয়ার জন্য অজুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো এবং গোসল শুদ্ধ হওয়ার জন্য শরীরের সর্বস্থানে পানি পৌঁছানো আবশ্যক। অন্যথায় পবিত্রতা অর্জিত হবে না। আর পবিত্রতা অর্জন ছাড়া নামাজ এবং যেসব ইবাদতের জন্য পবিত্রতা পূর্বশর্ত, সেগুলো আল্লাহর কাছে গৃহীত হবে না। তাই আমাদের সকলের উচিত সতর্কতার সঙ্গে অজু ও গোসল করা।

Post a Comment

0 Comments