সরকারের নানামুখী উদ্যোগ সত্ত্বেও আমাদের সমাজ বা রাষ্ট্রে মাদকাসক্ত লোকের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সক্রিয় তৎপরতার পরও এ হার খুব একটা কমছে না।
তাই সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, কেবলমাত্র সরকার বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর নির্ভর করে থাকলে সমাজে মাদকাসক্তের সংখ্যা কমবে না; বরং মাদকাসক্তি প্রতিরোধে অভিভাবকদের অধিক সচেতন হতে হবে। মাদকের অপব্যবহার রোধে করণীয় সম্পর্কে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে শুরু পারিবারিক পর্যায়েও সচেতনতা বাড়াতে হবে। আর এ জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার অভিভাবকদের সচেতনতা। সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে উদ্যোগী হয়েও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে সবচেয়ে আগে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে। পদক্ষেপ নিতে হবে প্রতিটি ঘর, অভিভাবক ও শুভাকাক্সক্ষীদের পক্ষ থেকে। কারণ মাদকাসক্তদের ৭০ দশমিক ৬ শতাংশই কৌতূহল থেকে মাদক গ্রহণ করে এ সর্বনাশের পথে জড়িয়ে যায়। আর ৭০ শতাংশ মাদকাসক্ত মাদকের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে। সম্প্রতি ঢাকা আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৮ বছর বা আরও কম বয়স থেকে মাদক গ্রহণকারীদের ৬২ দশমিক ৭ শতাংশ পুনরায় মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। মাদকাসক্ত থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পর পুনরায় মাদকাসক্ত হওয়া ব্যক্তিদের ৫২ দশমিক ১ শতাংশ কারাবন্দি হয়। তাদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ একবার, ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ দুই থেকে পাঁচবার এবং ১৫ দশমিক ১ শতাংশ পাঁচবারের বেশি গ্রেপ্তার হয়। ৯০ দশমিক ৬ শতাংশ ব্যক্তি ধূমপানের মাধ্যমে, ৮২ শতাংশ গলাধঃকরণ, ২৬ দশমিক ২ শতাংশ শ্বাসের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ করেন। মাদকাসক্তি প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে মাদকদ্রব্য ও মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে বর্তমানে মাদকসেবীর সংখ্যা অন্তত দেড় কোটি। মাদকসেবীরা গড়ে প্রতিদিন অন্তত ২০ কোটি টাকার মাদক সেবন করে থাকে। হিসাব অনুযায়ী মাসে ৬০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে সারাদেশে প্রায় ৩০ লাখ মাদক ব্যবসায়ী প্রতিদিন কমপক্ষে প্রায় ২০০ কোটি টাকার মাদক কেনাবেচা করে। আরো একটি ভয়ঙ্কর চিত্র হচ্ছে সারাদেশের ছড়িয়ে পড়া ইয়াবার শতকরা ৮৫ ভাগই ভেজাল। যার ফলে এসব ইয়াবা গ্রহণকারী মাদকাসক্তরা নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই আমরাও মনে করি, মাদকাসক্তি প্রতিরোধে অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে তাদের সন্তানরা কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে, কাদের সঙ্গে মিশছে এবং কী কাজে অর্থ ব্যয় করছে Ñ এসব যথাযথভাবে তদারকি করা। এসব যথাযথভাবে তদারকি করা গেলে পরিবার থেকেই এর বিস্তার কমে আসবে; অর্থাৎ এক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি ও কার্যকর।
0 Comments