দ্য গডফাদার সিনেমা ক্রমান্বয়ে ৩টি পূর্ণদৈর্ঘ্য অপরাধমূলক চলচ্চিত্রের সমন্বয়ে তৈরি। ইতালীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন সাহিত্যিক মারিও পুজো রচিত দ্য গডফাদার উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমা ৩টি পরিচালনা করেছেন ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা। ৩টি সিনেমার মূল কাহিনি কাল্পনিক কর্লিয়নি মাফিয়া পরিবারকে ঘিরে আবর্তিত। ৩টি সিনেমাই তুমুল দর্শকপ্রিয়তা পায়। সিনেমা ৩টি প্রথম পর্বটিকে সর্বসময়ের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে ধরা হয়। সিনেমা ৩টি যৌথভাবে ৯টি অ্যাকাডেমি পুরস্কার পায়।
সিনেমার প্রথম পর্বটি হলো দ্য গডফাদার। সিনেমাটি ১৯৭২ সালের ১৫ মার্চ মুক্তি পায়। মারিও পুজোর একই নামের উপন্যাসকে ভিত্তি করে ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা সিনেমাটি নির্মাণ করেন।
সিনেমাটির কাহিনি শুরু হয় এভাবেÑ ভিটো কর্লিয়নি মাদকসম্রাট ভার্জিল সলোজ্জের মাদক সম্পর্কিত একটি ব্যবসায়িক প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। যার কারণে তাকে আততায়ী দ্বারা হত্যার চেষ্টা করা হয়। ভিটো কর্লিয়নি হত্যাচেষ্টায় বেঁচে গেলেও গভীরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। এই অবস্থায় তার বড় ছেলে সনি পরিবারের দায়িত্বভার গ্রহণ করে। এর মধ্যে ছোট ছেলে মাইকেল ভার্জিল সলোজ্জ একজন পুলিশ অফিসারকে হত্যা করে, যার কারণে তাকে আমেরিকা ছেড়ে সিসিলিতে পালিয়ে যেতে হয়।
অবশ্য মাইকেল আবার আমেরিকায় ফিরে যায় তার বড় ভাই সনির মৃত্যুর খবর পেয়ে। মাইকেলের প্রত্যাবর্তনের পর ভিটো কর্লিয়নি তাকে পরিবারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব তুলে দেন। মাইকেল পরিকল্পনা করে যে সে তার ব্যবসা লাসভেগাসে সরিয়ে নেবে। কিন্তু তার আগে সে অত্যন্ত গোপনে পরিকল্পনা করে পাঁচ পরিবারের কর্ণধারদের হত্যা করে যারা কর্লিয়নি পরিবারকে নানাভাবে ক্ষতি করায় তৎপর ছিল। এছাড়াও পার্শ্বকাহিনি হিসেবে কর্লিয়নির মেয়ের নির্যাতিত বৈবাহিক জীবন, পশ্চিমের দুনিয়ায় জনি ফন্টেনের সাফল্য, পারিবারিক ব্যবসায় ভিটোর দ্বিতীয় ছেলে ফ্রেডোর কাহিনি এসেছে।
দ্য গডফাদার পর্ব-২
দ্য গডফাদার পর্ব-২ হলো গডফাদার সিনেমার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ২০ ডিসেম্বর ১৯৭৪ সালে। মারিও পুজোর উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করেই ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা দ্বিতীয় চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন। এ ছবিতে একইসাথে প্রথম পর্বের আগের এবং পরের কাহিনি এসেছে। চলচ্চিত্রটির কাহিনি প্রথম পর্বের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার সাথে সাথে পূর্বের কিছু ঘটনাও বর্ণনা করে। সংক্ষিপ্ত কাহিনি কিছুটা এরকমÑ মাইকেল কর্লিয়নি পরিবারের নতুন প্রধান এবং ১৯৫৮-৫৯-এর দিকে তার ব্যবসায়িক স্বার্থ আরো বিস্তৃত করার জন্য তৎপর। ছবির আরেক অংশে ফ্ল্যাশব্যাকে ১৯০১ সালের সিসিলি থেকে নিউইয়র্কে কর্লিয়নি পরিবার স্থাপন পর্যন্ত মাইকেলের বাবা ভিটো কর্লিয়নির কাহিনি দেখানো হয়।
দ্য গডফাদার পর্ব-৩
গডফাদার সিনেমার সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র হলো দ্য গডফাদার পর্ব-৩। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৯০ সালের ২৫ ডিসেম্বর। আবারও ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা পরিচালক হিসেবে তৃতীয় পর্বটি পরিচালনা করতে আসেন। মারিও পুজোর সাহায্য নিয়ে চিত্রনাট্যটিও লেখেন। চলচ্চিত্রটিতে মাফিয়া সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি মাইকেল কর্লিয়নির কাহিনির সমাপ্তি দেখানো হয়। যে কিনা তার অপরাধ সাম্রাজ্যকে বৈধ করার জন্য নানা চেষ্টায় রত। বাস্তবের কিছু ঘটনার সাথে সংযোগ দেখানো হয়। যেমন ১৯৭৮ সালে পোপ প্রথম জন পলের মৃত্যু, ১৯৮১ এবং ১৯৮২ সালে পোপ আর ব্যাংকের স্ক্যান্ড্রালÑ মাইকেল কর্লিয়নির সাথে ঘটনাগুলোর সম্পৃক্ততা দেখানো হয় দ্য গডফাদার পর্ব-৩ সিনেমায়।
সিনেমা
দ্য গডফাদার
পরিচালক
ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা
প্রযোজক
ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা, আলবার্ট এস রুডি,
গ্রে ফ্রেডরিকসন, ফ্রেড রুজ ও ফ্রেড ফুকস।
রচয়িতা : মারিও পুজো
সুরকার : নিনো রোতা
চিত্রগ্রাহক : গর্ডন উইলিস
সম্পাদক : পিটার জিনার
প্রযোজনা কোম্পানি : আলফ্রান প্রডাকশন্স
পরিবেশক : প্যারামাউন্ট পিকচার্স
মুক্তি : ১৫ মার্চ ১৯৭২ (দ্য গডফাদার)
২০ ডিসেম্বর ১৯৭৪ (দ্য গডফাদার পর্ব-২) ও
২৫ ডিসেম্বর ১৯৯০ (দ্য গডফাদার পর্ব-৩)
দৈর্ঘ্য : ৫৩৯ মিনিট
নির্মাণ ব্যয় : ৭৩.৫ মিলিয়ন ডলার
আয় : ৫৭৪.৮ মিলিয়ন ডলার
0 Comments