৭ চুক্তি স্বাক্ষর : দুই দেশের জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে বাংলাদেশ-ব্রুনাই ঐকমত্য

 মেজবাহউদ্দিন সাকিল : ব্রুনাই দারুসসালামের সুলতান হাজী হাসান-আল বলকিয়াহর আমন্ত্রণে ৩ দিনের সরকারি সফরে ২১ এপ্রিল ব্রুনাইয়ের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ব্রুনাইয়ের উদ্দেশে যাত্রা করে। তেল ও গ্যাসসমৃদ্ধ বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ ব্রুনাই সফরকালে দুদেশের মধ্যে ৭টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রুনাইয়ের রাজধানী বন্দরসেরী বেগাওয়ানে ব্রুনাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলে ব্রুনাইয়ের যুবরাজ হাজী আল-মাহতাদী বিল্লাহ বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে শেখ হাসিনাকে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে এম্পায়ার হোটেল অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবে নেয়া হয়। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী এই হোটেলেই অবস্থান করেন।

সফরের প্রথমদিন প্রধানমন্ত্রী হোটেলটির ইন্দেরা সামুদেরা বলরুমে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আয়োজিত সংবর্ধনায় যোগ দেন। একইদিন তিনি ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশের হাইকমিশনার আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দেন।

২২ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী ব্রুনাইয়ের সুলতান বলকিয়াহর সরকারি বাসভবন ইস্তানা নূরুল ইমানে চেরাদি লায়লা কেনচানায় সুলতান ও রাজপরিবারের সদস্যবর্গের সঙ্গে মিলিত হন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইস্তানা নূরুল ইমামে বায়তুল মেশ্যুরায় সুলতানের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় এবং দুই দেশের জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ-ব্রুনাই একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।

একইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এম্পায়ার হোটেল অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবে ব্রুনাই ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত দুদেশের ব্যবসায়ীদের বৈঠকে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী জামে আসর মসজিদ পরিদর্শন এবং এ মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন। এরপর শেখ হাসিনা সুলতান আয়োজিত তাঁর সরকারি বাসভবনে ভোজসভায় যোগ দেন।

২৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী ব্রুনাইয়ের রাজধানীর জালান কেবাংসানের কূটনৈতিক জোনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের নতুন চ্যান্সেরি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে তিনি রয়েল রেজালিয়া জাদুঘর পরিদর্শন করেন। শেখ হাসিনা ২৩ এপ্রিল স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় ব্রুনাই থেকে যাত্রা করে সন্ধ্যায় ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন।


একনজরে শেখ হাসিনার ব্রুনাই সফর

মিয়ানমারে নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া উচিত বলে মনে করছেন ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজী হাসান আল বলকিয়াহ। ব্রুনাইয়ের রাজধানী বন্দর সেরি বেগওয়ানে ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে সুলতান বলকিয়াহ এই মত প্রকাশ করেন। দুই দেশের সম্পর্ক সম্প্রসারণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফর মাইলফলক হয়ে থাকবে বলেও মন্তব্য করেন সুলতান।

ব্রুনাই রাজপরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর সুলতানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর। বৈঠক শেষে তাদের উপস্থিতিতে ৬টি সমঝোতা স্মারকে সই ও একটি কূটনৈতিক নোট বিনিময় হয়। গত নির্বাচনে জিতে টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান সুলতান। তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের স্বীকৃতি হিসেবে জনগণের রায়।

বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালুর বিষয়টি দুই নেতার কথাতেই এসেছে। প্রবাসী শ্রমিকদের বিষয়ে একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ করার প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নন-উইপেন রিলেটেড অঞ্চলে সামরিক সহযোগিতার বিষয়ও আলোচনায় এসেছে। হিউম্যানিটি, অপারেশন্স, নলেজ শেয়ারিং ও শান্তি মিশনে বাংলাদেশের অবদানের বিষয়টি দুই নেতার বৈঠকে আলোচনা হয়।

ওআইসির সদস্য দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পাঁচ রাষ্ট্র বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই ও ইন্দোনেশিয়া মিলে একটি অর্থনৈতিক জোট গড়ার সম্ভাবনার কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে বলেন।

বাংলাদেশ ও ব্রুনাইয়ের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা আরও জোরদার করার জন্য প্রধানমন্ত্রী আরও কিছু প্রস্তাব করেন। প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং এ লক্ষ্যে একটি অগ্রাধিকার বাণিজ্যব্যবস্থার সম্ভাব্যতা যাচাই করার প্রস্তাব করেন। শেখ হাসিনা দুদেশের মধ্যে যৌথ কমিশন গঠনের বিষয়ে আলোচনা করার প্রস্তাব দেন। তিনি পাট ও পাটজাত পণ্য, সফটওয়্যার, কৃষিপণ্য, সিরামিক ও টেবিলওয়্যার, জাহাজ নির্মাণ শিল্প ও পর্যটন ক্ষেত্রে সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার শিল্পপার্ক স্থাপন করছে যেখানে ব্রুনাইয়ের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে পারে। তিনি দ্বৈত কর পরিহার করার পাশাপাশি পারস্পরিক প্রচার ও বিনিয়োগের সুরক্ষার ওপর গুরুত্ব দেন।

প্রধানমন্ত্রী ব্রুনাইয়ের প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে অগ্রাধিকার দেন এবং বলেন, দুই দেশের মধ্যে স্বাস্থ্যপেশাজীবী ও ফার্মাসিউটিক্যালসের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সহযোগিতা গড়ে তোলা যেতে পারে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজী হাসান-আল বলকিয়াহ জ্বালানি খাতে সমন্বিত অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে ঐকমত্যের ভিত্তিতে কাজ করবেন বলে একমত হয়েছেন।

বাংলাদেশ ও ব্রুনাই ২৩ এপ্রিল এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেছে, দুই দেশ জ্বালানি খাতে সমন্বিত সহযোগিতার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সম্মত হয়েছে। পাশাপাশি দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির স্বার্থে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদার জোগান দিতে বাংলাদেশে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহসহ সরকার-টু-সরকার (জিটুজি) চুক্তির আওতায় দুই দেশ জ্বালানি খাতে সমন্বিত সহযোগিতার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সম্মত হয়েছে।

এতে বলা হয়, পেট্রোকেমিক্যাল, সমুদ্রে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান, কারিগরি সহযোগিতা ও সক্ষমতা উন্নয়নের মতো খাতে দুই দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত সহযোগিতায় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজী হাসান আল বলকিয়াহ সম্মত হয়েছেন।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৩৫তম বার্ষিকীতে সুলতান বলকিয়াহর আমন্ত্রণে ব্রুনাই দারুসসালামে ৩ দিনের সরকারি সফর ২৩ এপ্রিল শেষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিবৃতিতে বলা হয়, দুই নেতা বিনিয়োগের সম্ভাবনার ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থে বিশেষ করে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, জ্বালানি, আইসিটি, জাহাজ নির্মাণ, ম্যানুফ্যাকচারিং, পর্যটন অবকাঠামো, ব্লু-ইকোনমি এবং পাট শিল্পের মতো খাতে পারস্পরিক বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে সম্মত হয়েছেন।

ব্রুনাই দারুসসালাম বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক জোনের সুযোগ নিয়ে বিশ্বব্যাপী হালাল ফুড মার্কেটে প্রবেশের সুযোগ কাজে লাগাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। হালাল ফুড শিল্পে ব্রুনাইয়ের দক্ষতা প্রমাণিত।

পারস্পরিক চুক্তি অনুযায়ী উভয় পক্ষ প্রয়োজনীয় দক্ষতা উন্নয়নে স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা আরও জোরদার করবে বলে একমত হয়েছে। বিশেষ করে প্রশিক্ষণ, হেলথ কেয়ার প্রফেশনাল নিয়োগ ও ওষুধ উৎপাদন ও বাণিজ্যের পাশাপাশি বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবায় সহযোগিতায় সম্মত হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগে কার্যকর সুযোগ-সুবিধা দিতে আর্থিক কার্যক্রম জোরদারে দুই দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার প্রতি উভয় পক্ষ জোর দিয়েছে। অভিন্ন স্বার্থরক্ষা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ মোকাবিলা, পরিবেশগত সুরক্ষা এবং টেকসই উন্নয়নসহ বিভিন্ন ইস্যুতে জাতিসংঘ, ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি), কমনওয়েলথ এবং আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামসহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সহযোগিতা আরও জোরদারে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে। আসিয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে অব্যাহত চেষ্টার প্রতি দুই নেতা সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং এই সম্পর্ক উন্নয়নে পারস্পরিক লাভবান হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলে তারা একমত হয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেয়া মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের মানবিক সহযোগিতা প্রদান এবং তাদের প্রত্যাবাসন উদ্যোগের প্রতি ব্রুনাই দারুসসালাম সমর্থন দিয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক আচরণ ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়ায় পাশাপাশি তাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্বতঃস্ফূর্ত প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টার জন্য ব্রুনাই বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে।

অব্যাহত সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য ব্রুনাইয়ের সরকার এবং কক্সবাজারে ফিল্ড হাসপাতালে জরুরি ওষুধ ও স্বাস্থ্য উপকরণ সরবরাহ এবং আর্থিক সহযোগিতা দেয়ার জন্য ইয়াং ডি পারতুন অব ব্রুনাই দারুস সালামের প্রশংসা করেছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবৃদ্ধি লাভ এবং সামাজিক খাতে অসামান্য সাফল্য অর্জন করায় ব্রুনাইয়ের সুলতান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত করা ও স্বীকৃতি লাভ করার লক্ষ্যে জাতিসংঘ নির্ধারিত যোগ্যতার মানদ- সফলভাবে পূরণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান। ব্রুনাই দারুসসালাম খাদ্য ও কৃষি খাতে বাংলাদেশের সফলতা স্বীকার করেছে এবং কৃষি, মৎস্যচাষ এবং গবাদি পশু পালন খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার সম্ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছে। উভয় পক্ষ কৃষি ও খাদ্যপণ্য খাতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্ভাবনা অন্বেষণ করবে এবং জাতীয় উন্নয়ন অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণে সহযোগিতা করবে। নেতৃবৃন্দ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা স্বীকার করে সর্বাধিক রপ্তানি সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগানোর লক্ষ্যে নিজ নিজ দেশের স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে সক্রিয় বিনিময় উৎসাহিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

তারা যথাযথ ব্যবস্থার অধীনে একটি অগ্রাধিকার বাণিজ্যব্যবস্থার সম্ভাবনা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবেন এবং এ লক্ষ্যে একটি যৌথ সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে। দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের বিষয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে নেতারা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে মতবিনিময় করেন। তারা এ সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে তাদের সহযোগিতা জোরদার করার উপায় অন্বেষণ করার ওপর জোর দিয়েছেন।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারকরণে জনগণের সঙ্গে জনগণের ভাব বিনিময়ের গুরুত্ব স্বীকার করে নেতৃবৃন্দ সফর, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, ছাত্র ও কর্মীদের আসা-যাওয়া, তথ্য বিনিময় এবং গবেষণা ও উন্নয়ন প্রয়াসের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্যাপকতর ও গভীর সহযোগিতা উৎসাহিত করার জন্য অব্যাহত প্রয়াস চালিয়ে যেতে একমত হয়েছেন। উভয় পক্ষ দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ উন্নত করার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করতে সম্মত হয়েছে এবং অবিলম্বে বিমান চলাচল চুক্তি স্বাক্ষর করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। উভয় পক্ষ কর্মীদের প্রশিক্ষণসহ পারস্পরিক কল্যাণমূলক ক্ষেত্রে দুই দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান সহযোগিতা ও সম্পর্কের বিষয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে।

উভয় পক্ষ বিশেষ করে প্রতিরক্ষা খাতে সক্ষমতা অর্জন, জ্ঞান বিনিময়, শান্তি স্থাপন এবং মানবিক সহায়তা কর্মসূচিতে গভীর সহযোগিতা প্রদান উৎসাহিত করবে। পারস্পরিক কল্যাণে নতুন সম্ভাব্য ক্ষেত্র চিহ্নিত করতে সব স্তরের কর্মকর্তাদের ঘন ঘন তথ্য বিনিময়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে নেতৃবৃন্দ ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় প্রথম ফরেন অফিস কনসালটেশন আহ্বানকে স্বাগত এবং বন্দর সেরি বেগওয়ান নগরীতে ২০২০ সালে দ্বিতীয় ফরেন অফিস কনসালটেশন অনুষ্ঠানের অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানান। নেতৃবৃন্দ উভয় রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসী শ্রমিকদের মূল্যবান অবদান স্বীকার করেন এবং আলোচনার মাধ্যমে শ্রম সহযোগিতা সম্পর্কিত একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের সম্ভাবনা খুঁজে দেখার জন্য কর্মকর্তাদের উৎসাহ প্রদান করেন।

শেখ হাসিনা দূরদর্শী নেতৃত্বের অধীনে ব্রুনাই দারুসসালামের প্রশংসিত অগ্রগতিতে অবদান রাখার জন্য সুলতানকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, সুলতানের অবদানে ব্রুনাই দারুসসালামে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়েছে।

ওয়াওয়াসান ২০৩৫-এর অধীনে ব্রুনাই দারুসসালামের কৌশলগত জাতীয় উন্নয়ন নীতি বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জনের জন্য সুলতানের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।

ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজী হাসান-আল বলকিয়াহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী শান্তি, অভিবাসন, পরিবেশ সুরক্ষা, উন্নয়ন এবং মানবিক কর্মসূচির পাশাপাশি জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন শান্তিরক্ষা মিশনে ব্যাপক অংশগ্রহণসহ বাংলাদেশ সরকারের অবদান স্বীকার করেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ও তাঁর সফরসঙ্গীদের উষ্ণ অভ্যর্থনা ও আতিথেয়তা প্রদর্শন করার জন্য সুলতান, ব্রুনাই দারুসালামের ইয়াং ডি-পারতুয়ান ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং নিকটতম সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফর করার জন্য সুলতানকে আমন্ত্রণ জানান। ২২ এপ্রিল ইস্তানা নূরুল ইমানে আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে দুই নেতার নেতৃত্বে একটি আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

সফরকালে নেতৃবৃন্দ কৃষিতে বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি সহযোগিতা, মৎস্য ও পশুসম্পদ; তরল প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ (এলএনজি); যুব এবং ক্রীড়া এবং সংস্কৃতি ও শিল্প ক্ষেত্রে ৬টি স্মারকলিপি স্বাক্ষর করেন। নেতৃবৃন্দ উভয় দেশের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসামুক্ত সফর সুবিধা চালুর বিনিময় নোট স্বাক্ষরকে স্বাগত জানান। দুই নেতা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন যে, এই দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলো ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

Post a Comment

0 Comments