বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করছে পিইসি-জেএসসি পরীক্ষা

 নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীর হাতে নতুন বই তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ২৪ ডিসেম্বর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান গণভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার ফল হস্তান্তর করেন। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড এবং একটি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা পরীক্ষার এ ফল প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। একই অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশব্যাপী বিনামূলের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রমেরও উদ্বোধন করেন। উল্লেখ্য, অন্যান্য বছরের মতো এবারও সরকার সারাদেশে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।


অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা চলমান রাখার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এসব পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে সাহায্য করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকে যেহেতু ক্লাস ফাইভে এবং এইটে একটা পরীক্ষা হচ্ছেÑ জানি অনেকেই এর বিরুদ্ধে কথা বলেন, অনেকেরই আপত্তি আছে কেন এই পরীক্ষা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই পরীক্ষা হওয়ার ফলে আমাদের ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের মাঝে একটা আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠছে। তারা পরীক্ষার পরে হাতে যে একটা সার্টিফিকেট পাচ্ছে, সেটা আমি মনে করি তাদের সামনের দিকে পড়াশোনায় আরো মনোযোগী করবে।

কারণ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, সবাই তো আর উচ্চশিক্ষা নেবে না, অনেকেই কারিগরি শিক্ষা বা অন্য যেসব তাদের দক্ষতা রয়েছে, সেসব পেশায় তারা যাবে। এ অবস্থায় একটি সার্টিফিকেট থাকলে তাদের সুবিধা হয়।

অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি), প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও এর সমমানের ইবতেদায়ী পরীক্ষার ফল প্রধানমন্ত্রীর হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেয়া উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, একটি দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে আমাদের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী একান্ত প্রয়োজন। তাই আমরা শিক্ষার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। তবে শিক্ষাটা হতে হবে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান পড়ার আগ্রহ কমে যাওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করেই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে দেশে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয় এবং ছয়টি নির্মাণও করে দেয়।

শেখ হাসিনা এ সময় ট্যাক্স কমিয়ে শিক্ষার্থীদের নাগালের মধ্যে কম্পিউটার নিয়ে আসা সংক্রান্ত আওয়ামী লীগ সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, যার সুফল আমরা এখন পাচ্ছি। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, আজকে বাংলাদেশ ডিজিটাল হয়েছে। আজকে শিক্ষার্থীরা মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে বসে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারছে।

প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ক্রমে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠায় তাঁর সরকারের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, আমাদের আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন একটি শিক্ষিত জাতি গড়ে তুলতে হবে। কারণ, একটি শিক্ষিত জাতিই পারবে আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে চাই। ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা গ্র্যাজুয়েশন পেয়েছি। সেটি আমাদের ধরে রাখতে হবে। পাশাপাশি ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘ ২০৩০ সালের মধ্যে যে স্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) নির্ধারণ করেছে, আমরা এর যে ধারাগুলো আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য, সেগুলো ইতোমধ্যে আমাদের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এমডিজির মতো আমরা এসডিজি সফলভাবে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছি। সেই সাথে আমাদের একটা লক্ষ্য রয়েছে যে বাংলাদেশ যেন আরো উন্নত-সমৃদ্ধ হয়। উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশের লক্ষ্য যেমন আমরা সুনির্দিষ্ট করেছি, তেমনি নদীমাতৃক বাংলাদেশে আরো সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণের অংশ হিসেবে ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ প্রণয়ন এবং পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিয়েছি। অর্থাৎ ১০০ বছর পরেও বাংলাদেশ কেমন হবে সে পরিকল্পনাও আমরা জাতিকে দিয়েছি। কারণ আমি মনে করি, একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকলে তবেই আমরা আমাদের অর্জনগুলো আরো দ্রুত করতে পারব।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে পরীক্ষার ফলাফল উন্নতিতে আমরা অনেক প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। ফলাফল যেন সঠিক সময়ে হয় সেটাও আমরা দেখছি। বিনা পয়সায় বই বিতরণের সুবাদে শিক্ষার প্রতি মানুষের উৎসাহ বাড়ছে। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করে বৃত্তি দিচ্ছি; যেন দরিদ্র মেধাবীরা কোনোভাবে বঞ্চিত না হয় এবং তারাও তাদের মৌলিক অধিকার হিসেবে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। এজন্য শিক্ষকদের মর্যাদা ও বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমান প্রদানের মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষাকে সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে তাঁর সরকারের গৃহীত উদ্যোগ তুলে ধরে বলেন, যারা শিক্ষাগ্রহণ করছে, এর মাধ্যমে তাদের জন্য জীবন ও জীবিকা এবং সেই সাথে আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা

আমাদের লক্ষ্য। এতে তারা জীবনটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার সুযোগ পাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, সকলকে নিয়ে যে একটি সমন্বিত শিক্ষা কার্যক্রম, সেই কাজটাই আমরা করতে পেরেছি।

পরীক্ষায় প্রায় ৮৫ শতাংশ কৃতকার্য হওয়াকে ভালো উল্লেখ করে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ায় আরো উৎসাহ প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষক এবং অভিভাবকদের প্রতিও প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানান।

যারা পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছে তাদের এবং শিক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে যারা কৃতকার্য হতে পারেনি তাদের আরো মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।

উল্লেখ্য, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮Ñ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবার জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা নির্বাচনের পূর্বে ১ নভেম্বর থেকে ১৫ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। এতে ২৫ লাখ ৯৯ হাজার ১৬৯ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।

পিইসি ও ইবতেদায়ী পরীক্ষা ১৮ নভেম্বর থেকে ২৬ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৩০ লাখ ৯৫ হাজার ১২৩ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।

এ উপলক্ষে এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, জেএসসি ও জেডিসির মোট ২৫ লাখ ৯৯ হাজার ১৬৯ পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ২২ লাখ ৩০ হাজার ৮২৯ জন এবং এর পাসের হার হচ্ছে ৮৫.৮৩। এর মধ্যে ৬৮ হাজার ৯৫ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে।

Post a Comment

0 Comments